:: এম.আর মাহমুদ ::
২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শাসকদল তথা মহাজোটের মহা বিজয়ে আ’লীগের নেতা-কর্মীরা উজ্জীবিত। বিগত নির্বাচনে ভূমিধস বিপর্যয় জনিত কারণে ২০ দলীয় জোট সহ ঐক্যফ্রন্টের নেতা-কর্মীরা চরম হতাশায় ভুগছে। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তপশীল ঘোষণা করতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। বিএনপি’র বক্তব্য হচ্ছে, এমন দলকানা নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার প্রশ্নই আসে না। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রতি তাদের কোন আস্থা নেই। আগামী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হবে দলীয় প্রতীকে। তাই সারা দেশে প্রতিটি উপজেলায় ডজন ডজন প্রার্থী চেয়ারম্যান ও মহিলা-পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হওয়ার জন্য কোমরে গামচা বেঁধে মাঠে নেমে পড়েছে। প্রার্থীদের পোষ্টারে শহর থেকে গ্রামের হাঁট-বাজার পাড়ার অলিগলির দোকানের চেহারা বদলে গেছে। তবে সাধারণ ভোটারদের মাঝে তেমন কোন আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। আগে স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচনে ভোটার থেকে শিশু কিশোররা উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে নিজস্ব প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালাত। এখন সেই জৌলস নেই বললেই চলে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবীন ব্যক্তির অভিমত, “বাজারে গাভীর দুধ পাওয়া গেলে, গাভী পুষে লাভ কি?” তার ব্যাখ্যা জানতে চাইলে ওই প্রবীন ব্যক্তি পরিষ্কার করে বলতে রাজি হয়নি। তারপরও বলতে চেয়েছেন, এখন ভোটের বাজারে ভোটারদের কদর কমে গেছে। আগের মত ভোটারদের লাইনে দাঁড়িয়ে সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত ভোট দিতে হয় না। তাই ভোটারেরা ভোট নিয়ে মাথা ব্যথা করে না। শুধুমাত্র দলীয় প্রতীক পেলেই হয়। দলীয় প্রতীক যেন হযরত মূসা (আঃ) এর লাঠির মতো মুজেযা সম্পন্ন। প্রার্থীর যোগ্যতা অযোগ্যতার কোন দরকার নাই। এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে হবু প্রার্থীদের সিংহভাগই কোন না কোন পদে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছে। তারা পদায়নের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। ছাত্রজীবনে সাহিত্যিক, সাংবাদিক, রাজনীতিবীদ আবুল মনছুর আহমদের লেখা জনসেবা ইউনিভার্সিটির প্রবন্ধটি বার বার মনে পড়ে। কোন এক ভদ্র লোক মেম্বার নির্বাচিত হওয়ার পর জনসভায় বক্তব্য রাখতে গেলেই বলতেন, মেম্বার হয়ে কোন উন্নয়নমূলক কাজ করা যায় না। জনসেবা করতে হলে চেয়ারম্যান হতে হয়। পরের বার তিনি চেয়ারম্যান হলেন। কাজের কাজ কিছুই হল না। পরবর্তীতে জনসভায় বললেন এলাকার উন্নয়ন করতে হলে উপজেলা চেয়ারম্যান হতে হবে। জনগণ তাকে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করলেন। এরপরে বলতে শুরু করলেন, এমপি না হলে উন্নয়ন করা যায় না। পরবর্তীতে জনগণ তাকে এমপি হিসেবে নির্বাচিত করলেন। কিন্তু তারপরও তিনি বলতে শুরু করলেন, মন্ত্রী না হলে এলাকার উন্নয়ন করা যায় না। জনসেবা ইউনিভার্সিটির প্রসঙ্গটি অবতারণা করার কারণ হচ্ছে, এক সময়ের তোখুড় এক ছাত্রলীগ নেতা চট্টগ্রাম সিটি কলেজের সাবেক জিএস বর্তমানে মূল দলের একজন দায়িত্বশীল নেতা আক্ষেপ করে বলতে শোনা গেছে, যারা ক্ষমতায় আছে তারাই শুধু ক্ষমতার জন্য পাগল। ত্যাগী ও পরিচ্ছন্ন নেতাকর্মীদের সুযোগ দিতে নারাজ। তিনি দুঃখ করে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতাটির দুটো লাইন উল্লেখ করে বলেছেন, ‘এ জগতে হায় সে বেশি চায়, আছে যার ভুরি ভুরি, রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙ্গালের ধন চুরি’। তিনি আরো বলেন, বর্তমান প্রধান মন্ত্রী দলের অনেক ত্যাগী ও প্রবীন মন্ত্রীদের মন্ত্রীসভায় স্থান দেয়নি। ডিজিটাল যুগে ডিজিটাল এমপিদের মন্ত্রী সভায় স্থান দিয়ে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। অনুরূপভাবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পরিচ্ছন্ন ও নতুন নেতৃত্ব বিকাশের স্বার্থে নতুনদের মনোনয়ন দিলে দলের ভাব-মূর্তি বৃদ্ধি পাবে। অপরদিকে বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধির অভিমত তারা একটি ক্লাসের ছাত্র হিসেবে আদু ভাইয়ের মত খ্যাতি নিয়ে থাকতে চায়না। তারা তায় উচ্চ শ্রেণিতে প্রমোশন। নবীন ও প্রবীনদের যুক্তিও কোনভাবে উড়িয়ে দেয়ার মত নয়। আমার ব্যক্তিগত একটি শিক্ষণীয় গল্প বলে আমার লেখাটি শেষ করব। আমি যখন চট্টগ্রামস্থ হাজ্বী মুহাম্মদ মুহাম্মদ মহসিন কলেজের ছাত্র তখন অন্যান্য বন্ধুদের সাথে লালদীঘির পাড়ে ‘জব্বার মিয়ার ঐতিহাসিক বলী খেলা’ দেখতে গিয়েছিলাম। সেখানে ছোট বড় অনেক বলী কুস্তি খেলায় অংশ নিয়েছে। হঠাৎ করে বিদেশী এক নাগরিক (বন্দর থেকে আসা নাবিক হতে পারে) তিনি পরনের কাপড় খুলে হঠাৎ মাঠে নেমে পড়ল এবং স্থানীয় এক বলীর সাথে কুস্তি খেলে কুপোকাত হয়ে গেল। পরে দর্শকদের কাতারে এসে যে ভদ্র লোকের সাথে কাপড় চোপড়, পাসপোর্ট, টাকা-পয়সা রেখে গিয়েছিল তাকেও আর খুঁজে পায়নি। জনগণ ভোট দিতে পারলে অনেক প্রার্থীর অবস্থা সে বিদেশী নাবিকের মতো অবস্থা হতে পারে বলে বেরসিক লোকজনের অভিমত।
পাঠকের মতামত: